ডেটাবেজকে বলা হয় তথ্যভাণ্ডার। ডেটাবেজ হলো কম্পিউটারভিত্তিক একটি পদ্ধতি, যার সাহায্যে সংগৃহীত উপাত্ত সংরক্ষণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী পুনরুদ্ধার করা যায়। অন্য কথায়, ডেটাবেজ হচ্ছে সংগৃহীত উপাত্তের ভাণ্ডার, যা থেকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন উপায়ে এবং আকারে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। আরও সহজভাবে বলতে গেলে, ডেটাবেজ হলো অসংখ্য উপাত্তের একটি সুসজ্জিত তালিকা, যেখান থেকে নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় কোনো উপাত্তকে দ্রুত এবং খুব সহজেই শনাক্ত করার উপায় বা পন্থা আছে। এ তথ্যভাণ্ডারে বিভিন্ন প্রকার এবং বিপুল পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়। একজন ব্যবহারকারী তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো তথ্য এ তথ্যভাণ্ডার থেকে আহরণ বা সংগ্রহ করতে পারেন ।
একটি ডেটাবেজ মূলত কলাম এবং সারির সমন্বয়ে গঠিত। প্রত্যেকটি কলামের একটি করে হেডিং বা শিরোনাম থাকে। এই হেডিং বা শিরোনাম থেকেই বোঝা যায় সেই কলামে কী ধরনের ডেটা বা তথ্য আছে। হেডিং বা শিরোনামগুলো ফিল্ড নামে পরিচিত। আর পাশাপাশি কয়েকটি কলামের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি সারি । প্রতিটি সারিকে বলা হয় রেকর্ড।
এখানে SL No, Name, Age, Date of Birth, Village, Union নামের প্রতিটি কলম হলো এক একটি ফিল্ড এবং এসব ফিল্ডের অধীনে রয়েছে যথাক্রমে Abul Kasem 27, 2/2/1960, Tepra, Kanihat ইত্যাদি ডেটা। একই সারির এরকম কয়েকটি ফিল্ড মিলে হয় একটি রেকর্ড। উপরের উদাহরণের ডেটাবেজটিতে ৬টি ফিল্ড এবং ৬টি রেকর্ড রয়েছে।
ষাটের দশক থেকে কম্পিউটারে ডেটাবেজ ফাইলে ডেটা সংরক্ষণ শুরু হয়। তখন একটি ডেটাটেবিলের সমন্বয়ে একটি ডেটাবেজ গঠিত হতো। কিন্তু বর্তমানে ডেটাবেজ ধারণা অনেক ব্যাপকতা লাভ করেছে। এখন কোনো ডেটাবেজের আওতায় এক বা একাধিক ডেটাটেবিল, কুয়েরি, ফর্ম, রিপোর্ট, ইত্যাদি ফাইল থাকতে পারে। অর্থাৎ ডেটাবেজ হচ্ছে ডেটা তথ্যসমৃদ্ধ এক বা একাধিক ফাইলের সমষ্টি ।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ডেটাবেজ প্রোগ্রাম হলো মাইক্রোসফট এক্সেস, ফক্সপ্রো, ডিবেজ, ফক্সবেইজ, ওরাকল, ফোর্থ ডাইমেনশন, প্যারাডক্স প্রভৃতি ।
ডেটাবেজ প্রোগ্রামের বৈশিষ্ট্য
• ডেটাবেজে বিভিন্ন ধরনের টেবিল তৈরি করে তাতে অজস্র ডেটাকে সুসংগঠিত করে রাখা যায় এবং পরবর্তী সময়ে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়।
• ডেটাবেজে সংরক্ষিত বিপুল পরিমাণ তথ্য থেকে কাঙ্ক্ষিত যেকোনো তথ্যকে দ্রুত খুঁজে বের করা যায়।
• বৃহৎ ডেটাবেজের অসংখ্য রেকর্ড থেকে শুধু প্রয়োজনীয় রেকর্ডসমূহ নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে প্রিন্ট করা যায়। রিপোর্টে পছন্দমতো গ্রাফ, চার্ট এবং ছবি সংযোজন করা যায় ।
• ডেটাবেজের অসংখ্য রেকর্ড থেকে শুধু প্রয়োজনীয় রেকর্ডসমূহ নিয়ে মেইলিং লেবেল তৈরি করা যায়।
• ডেটাবেজ প্রোগ্রামে ডেটা এন্ট্রি করার সময় যাতে ভুল না হয় সেজন্য ফিল্ডে শর্ত দিয়ে ডেটা এন্ট্রির সীমা নির্ধারণ করা যায়। একে ইনপুট ভেলিডেশন বলা হয়। যেমন : কোন ডেটা টেবিলের Salary ফিল্ডের বেতন এন্ট্রি করা হচ্ছে। সর্বনিম্ন বেতন হলো ২০০০ এবং সর্বোচ্চ বেতন হলো ১১৫০০। এ ফিল্ডে ইনপুট ভেলিডেশনে যদি > 2000 and <=11500 শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় তাহলে ২০০০-এর সমান বা উপরে এবং ১১৫০০-এর নিচে বা সমান এন্ট্রি করা না হলে এন্ট্রি হবে না এবং ভুল বার্তা প্রদর্শিত হবে।
• কুয়েরিতে বিভিন্ন শর্তারোপ করে ডেটাবেজ থেকে রেকর্ডসমূহকে আলাদা করে ডেটা টেবিল তৈরি করা যায়। একটি নির্দিষ্ট ফিল্ডের উপর ভিত্তি করে দুই বা ততোধিক টেবিলের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য রিলেশন তৈরি করা যায়।
• ডেটাবেজ থেকে তথ্য খোঁজ করার জন্য ইন্ডেক্স ব্যবহার করা হয়। কোনো ফিল্ডের উপর ইন্ডেক্স করা হলে উক্ত ফিল্ডের ভেল্যু এবং রেকর্ড রেফারেন্স একটি অর্ডার অনুসারে সজ্জিত হয়। ইন্ডেক্স ফাইল মূল ডেটা ফাইলের কোনো রূপ পরিবর্তন না করে রেকর্ডসমূহ বিভিন্নভাবে সাজাতে পারে। সূচি দেখে কোন বই থেকে যেমন কোনো বিষয় সহজে খুঁজে বের করা যায় (তেমনি ডেটাবেজ থেকেও সহজে তথ্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব)।
• ফাইলসমূহের মধ্যে লিংক তৈরি করা যায়। ফলে একই তথ্য যেটি লিংক করা অন্যান্য ফাইলে আছে সেটি আপডেট করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব ফাইলেই আপডেট হবে।
• প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ডেটাবেজে উপাত্তগুলোর রেকর্ড স্ট্রাকচার পরিবর্তন করা যায়। একই কাজ বারবার করতে হয় এমন সব কাজের সমষ্টিকে Macro তৈরির মাধ্যমে একটি Single Action-এ রূপান্তর করে পরবর্তীতে যতবার ইচ্ছা ব্যবহার করা যায়। এতে একদিকে যেমন সময়ের সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে তেমনি একই কাজ বারবার করার ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
আরও দেখুন...